Assignment

সমাজকর্মের ক্ষেত্রগুলোকে চিহ্নিতকরণপূর্বক এটি পাঠে ব্যক্তি, দল ও সমষ্টির উন্নতির সম্ভাব্যতা নিরূপণ

মানবিক বিভাগের ২০২২ সালের এইচএসসি ও আলিম পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থী বন্ধুরা, আশা করছি সবাই ভালো আছো। তোমরা কি এইচএসসি, আলিম শ্রেণির ৫ম সপ্তাহের এ্যাসাইনমেন্ট সমাজকর্ম প্রথম পত্রের উত্তর সম্পর্কে ধারণা নিতে চাচ্ছো? কিংবা এসাইনমেন্টটি কিভাবে প্রস্তুত করতে হয় সে সম্পর্কে জানতে আগ্রহী? তাহলে বলবো তোমরা ঠিক ওয়েবসাইটে এসেছো। তোমাদের জন্য আজকের আর্টিকেলের আলোচ্য বিষয়- সমাজকর্মের ক্ষেত্রগুলোকে চিহ্নিতকরণপূর্বক এটি পাঠে ব্যক্তি, দল ও সমষ্টির উন্নতির সম্ভাব্যতা নিরূপণ। এই আর্টিকেলটি পড়ে তোমরা এইচএসসি পরীক্ষা ২০২২ ৫ম সপ্তাহের সমাজকর্ম প্রথম পত্র এ্যাসাইনমেন্ট সমাধান করতে পারবে।

এইচএসসি পরীক্ষা ২০২২ ৫ম সপ্তাহের সমাজকর্ম প্রথম পত্র প্রথম এ্যাসাইনমেন্ট

চলমান কোভিড ১৯ অতিমারির কারণে স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম ব্যহত হওয়ায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মােতাবেক পুনর্বিন্যাসকৃত পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের শিখন কার্যক্রমে পুরােপুরি সম্পৃক্তকরণ ও ধারাবাহিক মূল্যায়নের আওতায় আনয়নের জন্য অ্যাসাইনমেন্ট কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। বিভিন্ন গুচ্ছ বিষয় থেকে ২০২২ সালের এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য পঞ্চম সপ্তাহের সর্বমোট ২০ টি বিষয়ের অ্যাসাইনমেন্ট প্রকাশ করেন কতৃপক্ষ যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের শিখন মূল্যায়ন করে শিক্ষকগণ তথ্য সংরক্ষণ করবেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে কোভিড ১৯ সংক্রমণ রােধে সরকার ঘােষিত স্বাস্থ্যবিধি যথাযথ প্রতিপালনপূর্বক প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরােধ করা হলাে।

768x564

শ্রেণিঃ দ্বাদশ, বিভাগঃ মানবিক, বিষয়ঃ সমাজকর্ম ১ম পত্র, এ্যাসাইনমেন্ট নং-১

অ্যাসাইনমেন্ট : সমাজকর্মের ক্ষেত্রগুলোকে চিহ্নিতকরণপূর্বক এটি পাঠে ব্যক্তি, দল ও সমষ্টির উন্নতির সম্ভাব্যতা নিরূপণ।

শিখনফল/বিষয়বস্তু:

  • সমাজকর্মের ধারণা ব্যাখ্যা করতে পারবে
  • প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে পারবে
  • সমাজকর্মের পরিধি বর্ণনা করতে পারবে
  • সমাজকর্ম শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করতে পারবে।

নির্দেশনা/(সংকেত/ধাপ/পরিধি) :

  • সমাজকর্মের ধারণা ও বৈশিষ্ট্য
  • সমাজকর্মের পরিধি ব্যাখ্যা
  • সমাজকর্ম পাঠের প্রয়োজনীয়তা
  • ব্যক্তি, দল ও সমষ্টির উন্নয়নে প্রতিরোধ, প্রতিকার ও উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের ভূমিকা।

নির্দেশক :

  • সমাজকর্ম ধারণা ও বৈশিষ্ট্য
  • সমাজকর্মের পরিধি
  • সমাজকর্ম পাঠের প্রয়োজনীয়তা
  • প্রতিরোধ, প্রতিকার ও উন্নয়নমূলক কার্যক্রম
  • উপস্থাপন কৌশল

আরো দেখুন: এইচএসসি ২০২২ পঞ্চম সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্ট প্রকাশিত

এইচএসসি পরীক্ষা ২০২২ ৫ম সপ্তাহের সমাজকর্ম প্রথম পত্র প্রথম এ্যাসাইনমেন্ট সমাধান

যথাযথ মূল্যায়ন অনুসরণ পূর্বক তোমাদের জন্য এইচএসসি পরীক্ষা ২০২২ ৫ম সপ্তাহের সমাজকর্ম প্রথম পত্র প্রথম এ্যাসাইনমেন্ট সমাধান করা হলো।

সমাজকর্মের ক্ষেত্রগুলোকে চিহ্নিতকরণপূর্বক এটি পাঠে ব্যক্তি, দল ও সমষ্টির উন্নতির সম্ভাব্যতা নিরূপণ

সমাজকর্মের ধারণা ও বৈশিষ্ট্য

ধারণাঃ

সমাজকর্ম একটি সাহায্যকারী পেশা। সামাজিক বিজ্ঞানের একটি শাখাবিশেষ; যেখানে সামাজিক ও ব্যক্তি মানসিক পরিবর্তন বা সমাজকর্ম ও মানব সম্পর্কের উন্নয়ন বিষয়াবলি নিয়ে আলোকপাত করা হয়। সমাজকর্ম হচ্ছে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ও কৌশলনির্ভর একটি পেশাগত কর্মকাণ্ড ও প্রক্রিয়া, যা সামাজিক কল্যাণ (Social Betterment) আনয়নে প্রয়াস চালায়। জেন অ্যাডামস কে সমাজকর্মের জনক এবং Anna L. Dawes (এনা এল. ডয়েস) কে সমাজকর্ম শিক্ষার জনক বলা হয়।

ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অফ সোশ্যাল ওয়ার্কার্স (সমাজকর্মীদের জাতীয় সমিতি)-এর মতে, “সমাজকর্ম ব্যক্তি ও দলকে সাহায্য করবে এক পেশাগত কর্মগত যা তাদের সামাজিক ভূমিকা পালন ক্ষমতাকে পুনরুদ্ধার ও শক্তিশালী করে এবং সামাজিক এ লক্ষ্যে উপযোগী করে তোলে।”

সমাজকর্ম অভিধানের ব্যাখ্যানুযায়ী,“সমাজকর্ম একটি ব্যবহারিক বিজ্ঞান যা মানুষকে মনো-সামাজিক ভূমিকা পালন ক্ষমতার একটি কার্যকর পর্যায়ে উপনীত হতে সাহায্য করে এবং মানুষের কল্যাণকে শক্তিশালীকরণে কার্যকর সামাজিক পরিবর্তন আনয়ন করে।”

ডব্লিউ এ ফ্রিড ল্যান্ডারের মতে, ” সমাজকর্ম হল বৈজ্ঞানিক জ্ঞান ও মানবিক সম্পর্ক বিষয়ক এমন এক পেশাদার সেবা কর্ম, যা ব্যক্তিগত ও সামাজিক সন্তুষ্টি এবং স্বাধীনতা লাভে কোন ব্যক্তিকে একক অথবা দলীয় ভাবে সাহায্য করে।”

বৈশিষ্ট্যঃ

সমাজকর্মের মূল উদ্দেশ্য সমাজের কল্যাণ সাধনে সহায়তা করা । একটি সুখী ও সুন্দর সমাজব্যবস্থা কায়েম করতে সমাজকর্ম দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। সমাজকর্মের নিজ্ব কিছু লক্ষ্য আছে যার ভিত্তিতে কর্মসূচি প্রণীত হয়। সমাজবিজ্ঞানিগণ বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে সমাজকর্মের লক্ষ্য সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন। সমাজকর্মের লক্ষ্য “বিজ্ঞান, কলা ও পেশা হিসেবে সমাজকর্মের লক্ষ্য মানুষকে এমনভাবে সাহায্য করা, যাতে প্রতিটি ব্যত্তি, দল ও সমষ্টি সামাজিক, মানসিক এবং দৈহিক কল্যাণের অধিকারী হতে পারে ।

স্কিউমোর ও থ্যাকারে এর মতে, সমাজকর্মের উদ্দেশ্য হলো ব্যক্তি, পরিবার ও অন্যান্যদের মধ্যকার সুসম্পর্ক স্থাপনের বাধাসমূহ প্রতিরোধ ও দূর করা। প্রত্যেক মানুষের জীবন মানোন্নয়নের লক্ষ্যে ব্যক্তি ও সমাজের মধ্যকার পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়া বা পুনরুদ্ধারই সমাজকর্মের প্রধান লক্ষ্য ।

ওয়াল্টার এ ফ্রিডল্যান্ডার ১৯৮১ সালে সমাজকর্মের কয়েকটি বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করেন। যেমন-

  • ক. সমস্যা সমাধান, মোকাবিলা ও উন্নয়ন ক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ;
  • খ. জনগণকে সম্পদ, সেবা ও সুযোগ সুবিধার সাথে সম্পৃত্তকরণ;
  • গ. কার্যকরী ও সেবা, মানবসেবা ব্যবস্থার উন্নয়ন;
  • ঘ. সামাজিক নীতির বিকাশ ও উন্নয়ন।

গতিশীল ও পরিবর্তনশীল সমাজে মানুষ যখন সামাজিক পরিবেশের সঙ্গে আন্তক্রিয়ার সক্ষম হয় না, তখন সমাজকর্মী পরিবর্তন প্রক্রিয়ায় (change process) তাকে সামঞ্জস্য বিধানে সক্ষম করে তােলে। এক্ষেত্রে সমাজকর্মী গ্রহণ ও সংযুক্তি (intake and engagement), তথ্য সংগ্রহ ও অবস্থা নিরূপণ (data collection and assessment), পরিকল্পনা ও চুক্তি (planning and contracting), হস্তক্ষেপ ও পরিবীক্ষণ (intervention and monitoring) এবং মূল্যায়ন ও সমাপ্তিকরণ (evaluation and termination) ইতাদি সুনির্দিষ্ট ধাপসমূহ অনুসরণ করে থাকে, যা সমাজকর্মের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

সমাজকর্মের পরিধি ব্যাখ্যা

মূলত এর ব্যবহারিক দিক এর ক্ষেত্র বা প্রয়োগক্ষেত্র বা প্রয়োগ উপযোগিতা কে বোঝায়। সমাজকর্ম সমাজের সকল শ্রেণীর জনগণের সামাজিক সমস্যা মোকাবিলা পূর্বক তাদের অর্থ সামাজিক উন্নয়নের সম্ভাব্য ও প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রচেষ্টা চালায়। এই দৃষ্টিকোণ থেকে গোটা সমাজেরই সমাজকর্মের পরিধি বা ক্ষেত্রের আওতাভুক্ত।

সমাজকর্মের পরিধি বলতে সাধারণত সমাজকর্মের অনুশীলন বা প্রয়ােগক্ষেত্রকে (fields of social work practice) বােঝায়। সমাজকর্মের ব্যবহারিক বা প্রায়ােগিকদিক নিয়েই এর পরিধি নির্ধারিত হয়। পেশা হিসেবে সমাজকর্ম মানুষকে তার পরিবেশের সাথে সামঞ্জস্য রেখে কার্যকরভাবে আন্তঃক্রিয়ায় সাহায্য করে, তাই এর পরিধি ব্যাপক ও বিস্তৃত।

এ প্রসঙ্গে R. A. Skidmore এবং M. G. Thackeray বলেন,

“বৃহৎ দৃষ্টিকোণ হতে সমাজের অধিক সংখ্যক মানুষের দৈহিক, মানসিক, আবেগীয়, আধ্যাত্মিক ও আর্থিক প্রয়ােজনপূরণ এবং কল্যাণ সাধনই সমাজকর্মের অন্তর্ভূক্ত।” (Social work, in a broad sense, encompasses the well being and interests of a large number of emotional, spiritual, and economic needs.)

Elizabeth Wickenden বলেন,

“সমাজকর্মের অন্তর্ভুক্ত হলাে সেসব আইন, কর্মসূচি, সুযােগ-সুবিধা ও সেবামূলক কার্যক্রম, যেগুলাে জনগণের কল্যাণের জন্য স্বীকৃত মৌলিক প্রয়ােজনাদি পূরণের নিশ্চয়তা বিধান বা জোরদার ও উত্তম সামাজিক শৃংঙ্খলা রক্ষায় নিয়ােজিত।” (Social Work includes those laws, programs, benefits, and services which assure or strengthen provisions for meeting social needs recognized as basic to the wellbeing of the population and the better function of the social order.) 3700167 Paí (978117 facict State Boards of Charities, Charity Organization Society (COS) 47.

Settlement House Movement কর্যক্রমগুলাে কতগুলাে ধারা (dimensions) যেমন- যত্ননির্ভর (caring), প্রতিকারধর্মী (curing), পরিবর্তনমূলক (changing), সেবামূলক (servicing) ও ক্ষমতায়নমূলক (empowering) সংযুক্ত করেছে, যা সমাজকর্মের ক্ষেত্রকে বিস্তৃত ও ব্যাপক করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

সমাজকর্মের অন্তর্ভুক্ত বিষয় হচ্ছে মানুষ ও তার পরিবেশ (environment) এবং এমনকি প্রতিবেশ (ecology), যা মানুষের ওপর প্রভাব বিস্তার করে থাকে। সমাজ ও সামাজিক সমস্যা নিয়ে সমাজকর্ম আলােচনা করে থাকে। সামাজিক সমস্যার স্বরূপ, প্রকৃতি, কারণ ও প্রভাব বিশ্লেষণে প্রয়ােজন সামাজিক গবেষণা। তাই সমাজকর্মের বিস্তৃত পরিধির আওতায় সামাজিক গবেষণা অন্তর্ভুক্ত। সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিতকরণ সমাজকর্মের অন্যতম লক্ষ্য।

সামাজিক নীতি নির্ধারণ ও পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং তা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন ব্যতীত সামাজিক সমস্যা মােকাবিলা করে সামাজিক উন্নয়ন আনয়ন সম্ভব নয়। এজন্য সামাজিক নীতি ও পরিকল্পনা প্রণয়ন ও তার সঠিক বাস্তবায়ন সমাজকর্মের পরিধিভুক্ত। এছাড়া সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ, সমাজ সংস্কার, সমষ্টি উন্নয়ন, সংশােধনমূলক কার্যক্রম ও মানব সম্পদ উন্নয়ন সমাজকর্মের আওতাভুক্ত।

সমাজকর্মের পরিধি প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে Brenda DuBois এবং Karla Krogsrud Miley (১৯৯২) তাঁদের “Social Work : An Empowering Profession” গ্রন্থে উল্লেখ করেন,

পরিবার ও শিশুদের সেবা (family and children’s services), স্বাস্থ্য ও পুনর্বাসন (health and rehabilitation), মানসিক স্বাস্থ্য (mental health), তথ্য ও প্রেরণ (information and raferral), জীবিকাভিত্তিক সমাজকর্ম (occuption social work), কিশাের ও অপরাধী সংশােধন (juvenile and adult corrections), বয়স্ক বা প্রবীণ সেবা (gerotogical services), স্কুল সমাজকর্ম (school social work), বাসস্থান (housing), আয় নির্বাহ (income maintnance) এবং সমষ্টি উন্নয়ন (community development) হচ্ছে সমাজকর্মের প্রধান অনুশীলনক্ষেত্র।

সমাজকর্ম পাঠের প্রয়োজনীয়তা

সমাজকর্ম হচ্ছে মানুষকে সামাজিক ভূমিকা পালনে সক্ষম করে তােলার অভিপ্রায়ে প্রতিশ্রুতিশীল একটি বহুমুখী পেশা। মানবজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা হতে অর্জিত জ্ঞানের সমন্বয়ে গঠিত সমাজকর্ম হচ্ছে বৈজ্ঞানিক জ্ঞান, পেশাগত মূল্যবােধ ও দক্ষতাভিত্তিক ব্যবহারিক সামাজিক বিজ্ঞান। সমাজের জটিল ও বহুমুখী সমস্যার প্রতিকার, প্রতিরােধ ও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে সমাজকর্ম শিক্ষা ও তার প্রয়ােগ বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। বর্তমান বিশ্বের বহুমুখী সমস্যার বৈশিষ্ট্য, প্রকৃতি, কারণ ও প্রভাব সম্পর্কে যথাযথ অনুসন্ধান করে সমস্যা সমাধানে সমাজকর্মের বস্তুনিষ্ঠ জ্ঞানের গুরুত্ব উল্লেখযােগ্য। সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করে সমস্যা মােকাবিলায় বাস্তবমুখী ও যুগােপযােগী নীতি, পরিকল্পনা ও কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে সমাজকর্মের জ্ঞান বিশেষভাবে উপযােগী।

বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধ থেকে অদ্যবধি আমেরিকা, ইউরােপ, অস্ট্রেলিয়া, এশিয়া, ল্যাটিন আমেরিকা ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে প্রায় দুই হাজারের অধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজকর্মে উচ্চ শিক্ষা চালু রয়েছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয় হতে প্রতি বছর পঞ্চাশ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী সমাজকর্মে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় এক হাজার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজকর্ম বিষয়ে স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও পিএইচ.ডি. ডিগ্রি প্রদান করা হচ্ছে। সমাজকর্মে উচ্চ শিক্ষার গুরুত্ব ও প্রয়ােজনীয়তা বিবেচনা করে জাপানের টোকিওতে কলেজ অব সােশ্যাল ওয়ার্ক নামে একটি পৃথক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। চীনে ২০০৯ সালে ১০টি বিশ্ববিদ্যালয় দিয়ে শুরু করে এ পর্যন্ত প্রায় ৩০০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজকর্ম বিভাগ খােলা হয়েছে এবং ২০১২ সাল থেকে ৩৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচ.ডি. ডিগ্রি প্রােগ্রাম চালু রয়েছে;

যা সমাজকর্ম শিক্ষার প্রয়ােজনীয়তা তুলে ধরছে। বাংলাদেশেও উচ্চ মাধ্যমিক, স্নাতক, স্নাতকোত্তর, এম.ফিল ও পিএইচ.ডি. পর্যায়ে সমাজকর্ম শিক্ষা চালু রয়েছে। বাংলাদেশে পাঁচটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সহ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে প্রায় একশতটির মতাে কলেজে সমাজকর্মে স্নাতক প্রােগ্রাম চালু আছে। এছাড়া কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও সমাজকর্ম শিক্ষা শুরু হয়েছে। বাংলাদেশে সমাজকর্ম শিক্ষার গুরুত্ব ও প্রয়ােজনীয়তা উপলব্ধি করে BCSWE নিয়মিত ভাবে সেমিনার, কনফারেন্স ও জার্নাল প্রকাশ করছে।

সুতরাং একথা অনস্বীকার্য যে বর্তমান বিশ্ব ব্যবস্থার প্রেক্ষাপটে সমাজকর্ম শিক্ষার প্রয়ােজনীয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ব্যক্তি, দল ও সমষ্টির উন্নয়নে প্রতিরোধ, প্রতিকার ও উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের ভূমিকা

বর্তমান শিল্পসমাজে সমাজকর্মের অনুশীলন ও প্রয়ােগক্ষেত্র প্রতিনিয়ত বিস্তৃত হচ্ছে। পরিবারকল্যাণ, শিশুকল্যাণ, নারীকল্যাণ, যুবকল্যাণ, শ্রমকল্যাণ, বয়স্ককল্যাণ, চিকিৎসা, স্বাস্থ্য, মাদকাসক্তি, অপরাধ ও কিশাের অপরাধ, সংশােধনমূলক কার্যক্রম, এবং সামরিক ক্ষেত্রে সমাজকর্মের জ্ঞান ও দক্ষতা প্রয়ােগ হচ্ছে। সমাজকর্মীরা প্রশাসন, নীতি ও গবেষণা ক্ষেত্রেও ভূমিকা পালন করছে। সমাজ প্রতিনিয়ত গতিশীল ও পরিবর্তনশীল।

গতিশীল ও পরিবর্তনশীল সমাজে মানুষ যখন সামাজিক পরিবেশের সঙ্গে আন্তক্রিয়ার সক্ষম হয় না, তখন সমাজকর্মী পরিবর্তন প্রক্রিয়ায় (change process) তাকে সামঞ্জস্য বিধানে সক্ষম করে তােলে। এক্ষেত্রে সমাজকর্মী গ্রহণ ও সংযুক্তি (intake and engagement), তথ্য সংগ্রহ ও অবস্থা নিরূপণ (data collection and assessment), পরিকল্পনা ও চুক্তি (planning and contracting), হস্তক্ষেপ ও পরিবীক্ষণ (intervention and monitoring) এবং মূল্যায়ন ও সমাপ্তিকরণ (evaluation and termination) ইতাদি সুনির্দিষ্ট ধাপসমূহ অনুসরণ করে থাকে, যা সমাজকর্মের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। সামাজিক বা| সমাজকর্ম হস্তক্ষেপ, সামাজিক উপযােজন, সামাজিক উদ্ভাবন এবং পরিকল্পিত সামাজিক পরিবর্তন কৌশল প্রয়ােগ করে সমাজস্থ মানুষের বিশেষত অসুবিধাগ্রস্ত ও সুবিধাবঞ্চিত ব্যক্তি, দল ও সমষ্টির সমস্যা সমাধান ও যথাযথ সামাজিক ভূমিকা পালনে সক্ষম করে তােলে। সমাজকর্ম অনুশীলনে সমাজকর্মী পরিবর্তন প্রতিনিধি হিসেবে অনুঘটকের ভূমিকা পালন করে থাকে।

ব্যক্তি, দল ও সমষ্টির উন্নয়নে প্রতিরোধ, প্রতিকার ও উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করা হলো:

  • ১. সামাজিক কুসংস্কার দূরীকরণ : সকল সমাজেই কুসংস্কার সমাজ উন্নয়নের পথে বাধাস্বরুপ । ব্যাপক জনমত তৈরি, সামাজিক আন্দোলন সৃ্কি, আইন প্রণয়ন প্রভৃতির মাধ্যমে সমাজসংস্কার করা হয়। সমাজকর্ম এ লক্ষ্যে কাজ করে থাকে। এটি এর গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যের মধ্যে একটি।
  • ২. প্রয়োজনীয় সম্পদের ব্যবস্থা : সম্পদ বলতে বস্তুগত ও অবস্তুগত দু’ধরনের সম্পদকেই বুঝায় । সমাজকর্ম বিশ্বাস করে যে, সামাজিক সমস্যা সমাধানের জন্য সম্পদ. অপরিহার্য । তাই সামাজিক সমস্যা সমাধানে সম্পদ সরবরাহের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা সমাজকর্মের অন্যতম লক্ষ্য ।
  • ৩. জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা : যে কোন সমস্যার সমাধানের জন্য সমস্যাগরস্ত জনগণের অংশগ্রহণ অপরিহার্য।কারণ সংগঠিত জনগণই শত্তি। জনগণের অংশগ্রহণ ব্যতিরেকে সামাজিক সমস্যার সমাধান অসম্ভব । আধুনিক সমাজকর্ম তাই সমস্টিগত অংশগ্রহণকে গুরুত্ব প্রদান করে থাকে। এটি তার গুরুতুপূর্ণ লক্ষ্য ।
  • ৪. মানবসম্পদের উন্নয়ন : মানবসম্পদের উন্নয়ন মানে সমাজের উন্নয়ন। মানুষকে সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করার নীতিতে সমাজকর্ম বিশ্বাস করে। দল, মত, নির্বিশেষে সমাজের সকল মানুষের উন্নয়নের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা আধুনিক সমাজকর্মের অন্যতম লক্ষ্য।
  • ৫. সমন্বয় সাধন : সকল সরকারি ও বেসরকারি সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে সমাজের সর্বাধিক কল্যাণ করা সম্ভব। কারণ সমন্বয়হীন কাজের মাধ্যমে সুফল আশা করা যায় না। সমাজের মঙ্গলে নিয়োজিত সকল প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয় সাধন করা সমাজকর্মের অন্যতম লক্ষ্য

সমাজকর্মের ক্ষেত্রগুলোকে চিহ্নিতকরণপূর্বক ব্যক্তি, দল ও সমষ্টির উন্নতি

  • ৬. জাতীয় উন্নয়ন: জাতীয় উন্নয়ন বলতে সম দেশের উন্নয়নকে বুঝানো হয়েছে। এখানে বিশেষ ব্যক্তি বা কোন অঞ্চলের উন্নয়নকে আনা যাবে না। সমাজের সকল শ্রেণীর উন্নয়নের মাধ্যমে জাতীয় উন্নয়নকে তরান্বিত করা আধুনিক সমাজকর্মের গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য।
  • ৭. পারস্পরিক সম্পর্কের উন্নয়ন : মানুষের পারস্পরিক সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটলে অনেক সমস্যারই সমাধান সম্ভব হয়। সমাজকর্ম চায় সমাজে সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যমূলক পরিবেশ বজায় থাকুক। তাই কিভাবে মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কের বিস্তৃতি ঘটানো যায় সেই লক্ষ্যে সমাজকর্ম কাজ করে থাকে।
  • ৮. সমস্যার বৈজ্ঞানিক সমাধান : সমাজের প্রকৃত কল্যাণের জন্য সমস্যার স্থায়ী সমাধান অত্যাবশ্যক। স্থায়ী সমাধান তখনি সম্ভব যখন সমস্যাকে বৈজ্ঞানিকভাবে মোকাবিলা করা হবে। সমস্যার বিজ্ঞানসম্মত তথা স্থায়ী সমাধানের মাধ্যমে সমাজের উন্নয়ন সাধন সমাজকর্মের লক্ষ্য।
  • ৯. ব্যক্তিত্বের বিকাশ : সুপ্ত ক্ষমতার বিকাশের মাধ্যমে মানুষের ব্যক্তিত্ব প্রস্ফুটিত হয়। ব্যক্তিত্ব বিকশিত হলে ব্যক্তি নিজেই তার নিজের সমস্যা মোকাবিলা করতে সক্ষম হবে। মানুষের প্রতিভার বিকাশের মাধ্যমে ব্যন্তি প্রতিষ্ঠিত করা সমাজকর্মের একটি লক্ষ্য ।
  • ১০. ব্যক্তিস্বাধীনতা অর্জন: সমাজকর্ম ব্যত্তিস্বাধীনতায় বিশ্বাসী । মানুষের উপর কোন সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়ার নীতিতে বিশ্বাস করে না। মানুষকে পূর্ণ স্বাধীনতা প্রদান করে সমস্যার সমাধানের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা কায়েম করা সমাজকর্মের আরেকটি লক্ষ্য ।
  • ১১. ন্যায়বিচার কায়েম করা : সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা সমাজকর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য।মানবাধিকার, সামাজিক নিরাপত্তা ও শোষণ নির্যাতনের অবসান ঘটিয়ে সামাজিক ন্যায়বিচার কায়েমের লক্ষ্যে সমাজকর্ম কাজ করে থাকে।
  • ১২. অধিকার ও দায়িতু সম্পর্কে সজাগ করা : অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কে জাগ্রত না থাকলে আমরা তাকে বলি, অসচেতন মানুষ। যারা সচেতন নয় তাদের পক্ষে সমস্যার মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। সমাজকর্মের লক্ষ্য হচ্ছে মানুষকে তার কর্তব্য ও অধিকার সম্বন্ধে জাগ্রত করে তোলা ।
  • ১৩. দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন সাধন : সমাজকর্ম চায় মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি হোক আধুনিক। সনাতন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আধুনিক সমাজকর্মের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। সমস্যা সমাধানের প্রয়োজনে মানুষের মানসিকতা বিজ্ঞানভিত্তিক এ লক্ষ্যে সমাজকর্ম কার্যক্রম পরিচালিত হয়।

এটিই ছিল তোমাদের জন্য নির্ধারিত এইচএসসি, আলিম শ্রেণির ৫ম সপ্তাহের এ্যাসাইনমেন্ট সমাজকর্ম প্রথম পত্রের উত্তরসমাজকর্মের ক্ষেত্রগুলোকে চিহ্নিতকরণপূর্বক এটি পাঠে ব্যক্তি, দল ও সমষ্টির উন্নতির সম্ভাব্যতা নিরূপণ।

আরো দেখুন:

 

Tags

Siam Shihab

Hello, I'm Siam Shihab. I write Content about all Trending News and Information. I'm working on this Website since June 2021. You can Visit my Profile page to read all of my content. Thank You so much to know about me.
Back to top button
Close